চান্দিকা হাথুরুসিংহে: বাংলাদেশ ক্রিকেটের সফলতম কোচ

Pieal JannatulEditor
প্রকাশিত হয়েছে - 2017-04-13T16:21:58+06:00
আপডেট হয়েছে - 2017-04-13T16:21:58+06:00
মে, ২০১৪ থেকে চান্দিকা হাথুরুসিংহের তত্ত্বাবধানে
মোট ৪১টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে; জিতেছে যার ২২টিতে, হেরেছে ১৭টি আর কোন ফল ছাড়াই শেষ হয়েছে দুইটি। সবমিলিয়ে জয় এসেছে শতকরা ৫২ ভাগ ম্যাচে, যা এক কথায় অসাধারণ।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজার আকস্মিক অবসরের পর হাথুরুসিংহেকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশীয় ক্রিকেট সংস্লিষ্ট মহলে। অনেকেই অভিযোগ তুলেছে এই শ্রীলংকান কোচের নানা একগুঁয়ে সিদ্ধান্ত ও স্বেচ্ছাচারীতা নিয়ে, যা নাকি প্রভাব ফেলেছে মাশরাফিকে হঠকারীভাবে সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটকে বিদায় বলে দিতে। আসলেই মাশরাফির অবসরে হাথুরুসিংহের ভূমিকা কতটুকু তা একেবারেই ভিতরের ব্যাপার। তবে এ কথা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না যে হাথুরুসিংহের যথেষ্ট অবদান রয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে খাদের কিনারা থেকে তুলে এনে আবারও উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে দিতে। মে, ২০১৪ সালে এমন একটা অবস্থায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে হাথুরুসিংহের আগমন যখন কিছুই ঠিক মতো চলছিল না। সেই অবস্থা থেকে হাথুরুসিংহে বাংলাদেশকে উত্তরণই শুধু করেনি, তাঁর ব্যাপকতা এতটাই যে আজ বাংলাদেশ
ও
ের মত দলকে পেছনে ফেলে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের সপ্তম অবস্থানে, স্বপ্ন দেখছে সরাসরি ২০১৯
ও ওয়েলস বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা ওয়ানডে ম্যাচের সংখ্যা ছিল ২৮৩; যার মধ্যে জয় ৮০টি আর হার ২০০টি, অর্থাৎ জয়ের শতকরা হার মাত্র ২৯। র্যাংকিংয়ের সেরা আট দলের বিপক্ষে তো রেকর্ড আরও বাজে। ২৭টি জয়ের বিপরীতে হার ১৬১টি, জয়ের শতকরা হার ১৪! মে, ২০১৪ হতে টাইগাররা বিশ্বের সেরা আট দলের বিপক্ষে খেলেছে মোট ২৮ ম্যাচ, যার মধ্যে জিতেছে ১০টি আর হেরেছে ১৬টি, জয়ের শতকরা হার ৩৮। হাথুরুসিংহের আগমনের পূর্বে বাংলাদেশ সেরা আট দলের বিপক্ষে মোট ৫৫টি ওয়ানডে সিরিজ খেলে জিতেছিল মাত্র চারটি, আর হেরেছিল ৪৮টি। কিন্তু ৪৮ বছর বয়সী হাথুরুসিংহের কোচ হয়ে আসার পর বাংলাদেশ সেরা আট দলের বিপক্ষে নয় সিরিজের তিনটিতেই জিতেছে, হেরেছে পাঁচটি, আর সম্প্রতি শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজটি ১-১ সমতায় শেষ হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত পরিসংখ্যান থেকে শুধু উন্নতির চিত্রই দেখা যাচ্ছে, তবে এ কথাও অনস্বীকার্য যে হাথুরুসিংহে দল নিয়ে যতটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন এবং এত ঘন ঘন খেলোয়াড় পরিবর্তন করেছেন তা বাংলাদেশী ক্রিকেট সংস্কৃতিতে অভূতপূর্ব। জানুয়ারি, ২০১০ হতে এপ্রিল, ২০১৪ পর্যন্ত মোট ২২টি টেস্টে অভিষেক হয়েছিল ৩২জন বাংলাদেশী ক্রিকেটারের। অন্যদিকে মে, ২০১৪ হতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে মোটে ১৭টি, কিন্তু এরই মধ্যে অভিষেক হয়ে গেছে ২৯জন ক্রিকেটারের। অন্যদিকে বিবেচ্য যদি হয় ওয়ানডে ক্রিকেট, সেক্ষেত্রে জানুয়ারি, ২০১০ হতে এপ্রিল, ২০১৪ পর্যন্ত মোট ৭২ ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল ৩৬ জনের। হাথুরুুসিংহ দায়িত্ব নেবার পর মাত্র ৪১ ম্যাচেই ওয়ানডে ক্যাপ পেয়েছে ৩২ জন ক্রিকেটার। তবে আবারও, হাথুরুসিংহ এসে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার সাহস দেখিয়েছেন, যা বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার গ্রাফকে ঊর্ধ্বমুখী করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কথা। এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত মোট ৯৪ ইনিংসের মধ্যে ৬৩ ইনিংসে সাত নম্বরে ব্যাট করেছিলেন রিয়াদ। আর তাতে সাতটি অর্ধশতকসহ ৩৩.৪৩ গড়ে ১,৪০৪ রান করেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৫ সাল হতে, তিনি মোট ২৫টি ওয়ানডের মধ্যে চার নম্বরে ব্যাট করেছেন ১৪ ম্যাচে, আর তিনটি অর্ধশতক ও বিশ্বকাপে সেই টানা দুই শতকসহ ৩৮.৫৩ গড়ে ৫০১ রান করেছেন।
আরেকজন খেলোয়াড়, হাথুরুসিংহের আগমন যার ক্যারিয়ারের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৪৩ টেস্টে তিনটি শতক, ১৪টি অর্ধশতকসহ ৩৩.৪৮ গড়ে ২,৫১১ রান করেছিলেন এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে টাইগার টেস্ট অধিনায়ক ১১ টেস্টে ৪৪.৩৫ গড়ে ৭৫৪ রান করেছেন, সাথে আছে দুইটি শতক ও তিনটি অর্ধশতক। উপরিউক্ত পরিসংখ্যান ও আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয় মোটামুটি পরিষ্কার যে টাইগারদের সাম্প্রতিক উন্নতির পেছনে হাথুরুসিংহের প্রভূত ভূমিকা রয়েছে। তাঁর কোচিংয়ের ধরণ ও বিভিন্ন একনায়কসুলভ সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করাই যায়। পাশাপাশি এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে তাঁর কোচিং যথেষ্ট ফলদায়ক। আর দিনশেষে সাফল্যই তো মূল কথা। আর তাই হাথুরুসিংহেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল, এবং সম্ভবত সেরা কোচের খেতাব দিলেও অত্যুক্তি হবে না।
- জান্নাতুল নাঈম পিয়াল, প্রতিবেদক, বিডিক্রিকটাইম ডট কম