আশরাফুলের ব্যাটে কার্ডিফ রূপকথার ১৬ বছর

প্রকাশিত হয়েছে - 2021-06-18T14:10:50+06:00
আপডেট হয়েছে - 2021-06-18T14:10:50+06:00
১৮ জুন,২০০৫। প্রবল পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারায় ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তখনও থিতু হতে না পারা বাংলাদেশ। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনের সেই জয় 'কার্ডিফ রূপকথা' নামে পরিচিতি পায় বেশ। তবে সেই ম্যাচটি বাংলাদেশিদের কাছে হয়ে আছে রূপকথার চেয়েও বেশি কিছু।
[caption id="attachment_161934" align="aligncenter" width="1269"]

অস্ট্রেলিয়া বধের পর উচ্ছ্বসিত বাশার ও আশরাফুল।
বিডিক্রিকটাইম এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।[/caption]
কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো রূপকথার চেয়ে বেশি হবেই বা না কেন? অস্ট্রেলিয়া তখন মাঠে নামা মানেই নিশ্চিত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া। আর তখনকার বাংলাদেশের অবস্থান ঠিক তার বিপরীত। আগের ১০৭ ম্যাচে জয় ছিল মাত্র সাতটিতে। তাইতো দীর্ঘ ১৬ বছর পর এসেও টাইগারদের কার্ডিফের সেই জয়ের মাহাত্ম্য এখনও অন্যরকম।
২০০৫ সালের ১৮ জুন ন্যাটওয়েস্ট ত্রিদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে অজিদের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। কার্ডিফের ভেজা উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অজি কাপ্তান রিকি পন্টিং।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ইনিংস শুরু করতে নামেন সেসময়কার সবচেয়ে বিধ্বংসী দুই ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট আর ম্যাথু হেইডেন। মাশরাফির করা প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন গিলক্রিস্ট। পুরো ম্যাচেই সেদিন মাশরাফির সামনে নতজানু থাকতে হয় অজি ব্যাটসম্যানদের।
মাশরাফির পর আরেক পেসার তাপস বৈশ্য এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিংকে। দলীয় স্কোর দুই অংকের ঘরে পৌঁছানোর আগেই দুই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। তাদের স্কোর তখন ৯ রানে দুই উইকেট। পুরো ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার হারানো ৫ উইকেটের সবগুলোই ছিল পেসারদের দখলে। ৩৭ রান করা হেইডেনকে যখন নাজমুল হোসেন প্যাভিলয়নের পথ দেখান অজিদের স্কোর তখন ৫৭/৩।
হেইডেনের আউট হওয়ার পর অবশ্য ড্যামিয়েল মার্টিন ও মাইকেল ক্লার্ক জুটিতে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে অজিরা। ৭৭ রান করা মাট্রিনকে আউট করে মার্টিন-ক্লার্কের ১০৮ রানের জুটি ভাঙেন তাপস বৈশ্য। এরপর ক্লার্কেও ফেরান তাপস। শেষদিকে মাইক হাসির ৩১ ও সাইমন ক্যাটিচের ৩৬ রানের সুবাদে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪৯ রানের পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া৷
ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে ২৫০ রানের লক্ষ্য পূরণ করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া বাংলাদেশের জন্য মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু এক আশরাফুলের কাছেই যেন হেরে বসে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
[caption id="attachment_161935" align="aligncenter" width="1267"]

ম্যাচ জয়ের পর বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের বিজয়োল্লাস।
[/caption]
শুরুতেই নাফিস ইকবালকে হারিয়ে চাপে পড়লে টাইগারদের ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন জাবেদ ওমর বেলিম ও তুষার ইমরান। কিন্তু এই দুই ব্যাটসম্যানের দ্রুত বিদায়ে ফের চাপে পড়ে যায় ডেভ হোয়াইটমোরের শিষ্যরা।
এরপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে অজিদের সামনে লড়াকু মানসিকতায় দাঁড়িয়ে যান আশরাফুল ও হাবিবুল বাশার। এই জুটি থেকে ১৩০ রান পায় বাংলাদেশ। ৭২ বলে ৪৭ রান করে বাশার ফিরলেও অজি বোলারদের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে যান আশরাফুল। মেহরাব হোসেন অপির পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক হাঁকান তিনি।
১০১ বলে ১০০ রান করে আশরাফুল যখন সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের তখন প্রয়োজন ১৭ বলে ২৩ রান। আফতাব ও রফিকের ব্যাট থেকে দু'টি করে বাউন্ডারি এলে শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ৭ রান। শেষ ওভারের প্রথম বলেই লংঅনের ওপর দিকে আফতাবের হাঁকানো ছক্কা বোলার গিলেম্পির তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। পরের বলেই এক রান নিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে টাইগাররা। কার্ডিফের জয়ের সুবাস পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
হাঁটি হাঁটি পায়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। যেকোন দিন যেকোন পরিস্থিতিতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দলকেও হারিয়ে দিতে পারার সার্মথ্য রাখে। তবে কার্ডিফের সেই অস্ট্রেলিয়া বধের গল্প সবসময় রূপকথার চেয়েও বেশি রোমাঞ্চকর হয়েই থাকবে।
এক নজরে সেই ম্যাচের স্কোরকার্ড
টস : অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া ২৪৯/৫ (৫০ ওভার)
ড্যামিয়েন মার্টিন ৭৭, মাইকেল ক্লার্ক ৫৪, ম্যাথু হেইডেন ৩৭, সাইমন ক্যাটিচ ৩৬, মাইক হাসি ৩১;
তাপস বৈশ্য ১০-১-৬৯-৩, মাশরাফি বিন মুর্তজা ১০-২-৩৩-১, নাজমুল হোসেন ১০-২-৬৫-১
বাংলাদেশ ২৫০/৫ (৪৯.২ ওভার)
মোহাম্মদ আশরাফুল ১০০, হাবিবুল বাশার ৪৭, তুষার ইমরান ২৪, আফতাব আহমেদ ২১*, জাবেদ ওমর ১৯, মোহাম্মদ রফিক ৯*;
জেসন গিলেস্পি ৪১/২, মাইকেল কাসপ্রোভিচ ১০-০-৪০-১, ব্র্যাড হগ ৯-০-৫২-১
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : মোহাম্মদ আশরাফুল।