টেস্ট ক্রিকেটেও কি লেগেছে নতুন বাংলাদেশের হাওয়া?
নতুন বাংলাদেশে যেন বদলে গেছে ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্সও।

টেস্ট ক্রিকেটেও কি লেগেছে নতুন বাংলাদেশের হাওয়া?
রাইসান কবিরক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত হয়েছে - 2024-09-04T18:22:33+06:00
আপডেট হয়েছে - 2024-09-04T18:22:33+06:00
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশের প্রায় সব জায়গাতেই লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। পরিবর্তনের সেই হাওয়া এতটাই জোরে বইছে তা যেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্সটাকেও বদলে দিল অনেকখানি। নইলে পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করা – সুদূরতম কল্পনাতেও কি ভাবতে পেরেছিলেন কেউ? অভাবনীয় সেই ঘটনাকেই বাস্তবে নামিয়েছে টাইগাররা। [গুগল নিউজে বিডিক্রিকটাইম ফলো করুন]
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সিরিজসেরা হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের অবস্থা বরাবরই কিছুটা নড়বড়ে। এইতো সর্বশেষ ঘরের মাঠের শ্রীলঙ্কা সিরিজেও ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে সমানে সমানে টক্কর দেওয়ার পর টেস্ট সিরিজে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিল বাংলাদেশ। দুই টেস্টের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হেরে ঘরের মাঠে পেয়েছে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ।
লঙ্কা সিরিজের পর মাঝে কিছুটা বিরতি ছিল টেস্ট ক্রিকেটারদের জন্য। এরপর এই পাকিস্তান সিরিজ। মাঝের এই সময়ে এমন কী পরিবর্তন হয়ে গেল দলের মাঝে? পরিবর্তনের সীমারেখাটা দল ছাড়িয়ে গোটা বাংলাদেশ বিবেচনা করলে পরিবর্তন হয়েছে বেশ। বহু বছর পর স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ফলে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তিতে নোবেলবিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠন করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
নতুন সরকারের অধীনে দেশের নানা জায়গাতে আসছে পরিবর্তন, বিসিবিতেও এসেছে। কিন্তু তাই বলে টেস্ট দলের পারফরম্যান্সে এতখানি বদল? এ কেমন করে সম্ভব!
নাহিদ রানার গতির সামনে খাবি খেয়েছেন পাক ব্যাটাররা। বিদেশের মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশের সফল না হওয়ার জন্য
বড় কারণ ছিল পেস ইউনিট। স্পিনে শক্তিশালী বাংলাদেশ দেশের উইকেটে স্পিনের ঘূর্ণি
নাচনে নাচাতো অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মত বাঘা বাঘা দলকে। কিন্তু বিদেশে ঘাসের
পেসবান্ধব উইকেটে খেলতে গেলেই নাভিশ্বাস উঠে যেত টাইগার ব্যাটারদের। দলের পেসাররাও
উইকেট থেকে সেভাবে সুবিধা আদায় করতে পারতেন না। ফলে বিদেশের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ
মানেই যেন বাংলাদেশের হারই ধরে নিতেন সমর্থকরা। খুব ভালো খেলতে পারলে হয়তবা ড্রয়ের
আশা করা যেত। কিন্তু জয়? সে তো সোনার হরিণ।
জয় নামক সেই সোনার হরিণ এবার ধরা দিতে শুরু করেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টে জয়, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয় বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সাফল্য। সেই সাফল্যগাঁথায় এবার যুক্ত হল রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের ইতিহাস। এবার আর এক ম্যাচেই থেকে থাকেনি সাফল্যের প্লেন। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দুই ম্যাচেই পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়ে বাংলাওয়াশের স্বাদ দিয়েছে টাইগাররা। অনেকের মতেই, বাংলাদেশের এবারের সাফল্য ছাড়িয়ে গেছে আগের সবকিছুকেই, এমনকি মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টকেও।
সিরিজে দলগত পারফরম্যান্স তো চোখের সামনেই ভাসছে, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিকে তাকালেও চোখধাঁধানো সব ব্যাপার চোখের সামনে চলে আসতে বাধ্য। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের কোনো পেসার ১৫২ কিমি/ঘণ্টা গতিতে বল করবেন, এরকমটা ভাবতে পেরেছিল কেউ কখনও? অবিশ্বাস্য সেই কাজ করে দেখিয়েছেন টাইগার পেসার নাহিদ রানা। সিরিজজুড়ে দুর্দান্ত বল করে গেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা – সবাই নিজেদের কাজটা করে দিয়েছেন সময়মতো। পাক ব্যাটারদের উইকেটও তাই তোলা গেছে বেশ সহজেই। এমন আগুন ঝরানো ভয়াল সুন্দর পেস আক্রমণের অপেক্ষাতেই তো এতদিন অপেক্ষায় ছিল সবাই।
সুযোগ পেয়ে আলো ছড়িয়েছেন সাদমান।
সিরিজ শুরুর আগে চোটের কারণে ছিটকে গেলেন মাহমুদুল হাসান জয়। ওপেনিংয়ে তার জায়গায় সুযোগ পেলেন সাদমান ইসলাম। প্রথম ম্যাচে কী দারুণভাবেই না নিজের সামর্থ্যের জানান দিলেন সাদমান। খেললেন ৯৩ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। জয় চোটমুক্ত হলেও পরের টেস্টে সুযোগ পাবেন কিনা তাই এখন চিন্তার ব্যাপার। এরকম সুস্থ প্রতিযোগিতাই তো দরকার দলে।
চমৎকার ব্যাটিং উইকেটে বাংলাদেশের হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার ইতিহাস বহু আছে। তবে এবার রাওয়ালপিন্ডিতে লেখা হয়েছে নতুন গল্প। মুশফিকুর রহিমের ১৯১, সাদমানের ৯৩, লিটন দাস এবং মেহেদী হাসান মিরাজের ফিফটির সুবাদেই প্রথম ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। পরে সেই লিডে চাপা পড়েই দ্বিতীয় ইনিংসে ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং।
প্রথম ম্যাচে রাওয়ালপিন্ডির গ্রিন টপে পঞ্চম দিনে ছড়ি ঘুরিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। অন্যদিকে পাকিস্তান হাপিত্যেশ করে বেড়িয়েছে, ‘কেন বিশেষজ্ঞ স্পিনার খেলালাম না? কেন আগেভাগে প্রথম ইনিংসে ডিক্লেয়ার করে দিলাম?’ এসব তো একসময় বাংলাদেশ করত। এবার করতে হয়েছে প্রতিপক্ষকে। এরকম বাংলাদেশই তো চেয়েছিলাম আমরা, নাকি?
দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে হাওয়া ৬ উইকেট। এই বুঝি অলআউট হয়ে যাবে অবস্থা। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখলেন লিটন এবং মিরাজ। লিড নেওয়া না গেলেও কাছাকাছি চলে যাওয়া গেল। পরে পাকিস্তানকে চেপে ধরে ম্যাচটাও জিতে নেওয়া গেল।
মাঠের খেলার এতকিছুর সাথে আরও একটি ব্যাপার যোগ করতেই হবে – বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। গত প্রায় ২ মাস ধরে বেশ অস্থির সময় কাটছে বাংলাদেশের। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে বহু হতাহতের পর আন্দোলন রূপ নেয় এক দফা দাবিতে – স্বৈরাচারের পদত্যাগ। তীব্র গণ আন্দোলনে রাস্তায় নেমে যান সকল স্তরের সাধারণ মানুষ। এত এত মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, গুলি চালিয়ে, পিটিয়ে, খুন, গুম, আটক – কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। জয় হয়েছে দেশের মানুষেরই।
দেশের কঠিন পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে জয় উপহার দিতে পেরে খুশি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে শান্তিতে নোবেলবিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের গত ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা সময় লাগছে বর্তমান সরকারের। এখনও তাই জনজীবন শতভাগ স্বাভাবিক হতে পারেনি। মাঝে বন্যা এসেও ক্ষয়ক্ষতি করে দিয়েছে ব্যাপক।
এই সংকটের মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য এমন ইতিহাস রচনা করা জয় নিশ্চিতভাবেই বাড়তি আনন্দের। কঠিন সময়ে দেশের মানুষের মুখে কিছুটা হলেও হাসি তো ফুটল। আনন্দের কিছু একটা উপলক্ষ্য তো পাওয়া গেল। ক্রিকেট তো এই জাতির জন্য বহু আগে থেকেই এক হওয়ার মাধ্যম।
সবাই যেভাবে এক দফা দাবিতে এক হয়েছিল, সেরকম এক হয়েই তো এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিনগুলোতে - হোক তা ক্রিকেটের মাঠে কিংবা অন্য কোথাও। সবাই এক থাকলে যে সাফল্য ধরা দেবে তা তো এখন প্রমাণিতই। এমন একতাবদ্ধ জাতিও অতীতে অত বেশি দেখা যায়নি, যেমনটা দেখা যায়নি ক্রিকেটের মাঠে সবার সম্মিলিত পারফরম্যান্স। এখন তাই বলাই যায়, এমন বাংলাদেশই তো চেয়েছিলাম!
বাংলাদেশের ক্রিকেটসহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ধরনের খবর সবার আগে পেতে এখানে ক্লিক করে সাবস্ক্রাইব করুন BDCricTime Videos চ্যানেলটি।
বল বাই বল লাইভ স্কোর পেতে আর নয় বিদেশি অ্যাপ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের
সাম্প্রতিক খবর এবং বল বাই বল লাইভ স্কোর আপনার মুঠোফোনে পেতে এখনি প্লে-স্টোর
থেকে BDCricTime সার্চ করে ডাউনলোড করুন বাংলাদেশের নাম্বার
ওয়ান ক্রিকেট অ্যাপটি। অথবা ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন এখানে। ভালো লাগলে অবশ্যই রেটিং
দিয়ে উৎসাহী করুন।