আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সম্প্রতি ১৫ বছর পূর্ণ করলেন বাংলাদেশ দলের সীমিত ওভার ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৩৩ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার ক্যারিয়ারের এতগুলো বছর পেরিয়ে এলেও এখনও টাইগার দলের সেরা পারফরমারদের একজন। তার নেতৃত্বেই গেল ২ বছরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অবিস্মরণীয় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ।
গতির ঝড় তুলে জাতীয় ক্রিকেটে আবির্ভাব মাশরাফির। বয়সভিত্তিক দল থেকে ‘এ’ দলে সুযোগ। এরপর দ্রুতই ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে। ২০০১ সালের নভেম্বরে ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে পা রাখেন মাশরাফি। যদিও টেস্ট অভিষেকই আগে হয়েছিল ডানহাতি এ পেসারের। ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ক্যাপ মাথায় ওঠে মাশরাফির। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চলতি সপ্তাহে ১৫ বছর পূর্ণ হল মাশরাফি মুর্তজার। এ বিশেষ উপলক্ষে তার সতীর্থ ও বন্ধুরা তাকে নিয়ে সম্প্রতি শেয়ার করেন কিছু মনে রাখার মতো ঘটনা-
* তামিম ইকবাল- ২০১৫ বিশ্বকাপে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে তখন বাদ দেয়াটা ছিল খুবই সহজ। সেই দুঃসময়ে তিনি যেভাবে আমার যত্ন নিয়েছেন, তা অবিশ্বাস্য। অনেক সময় দিয়েছেন আমাকে। আমি বুঝতে পারি, তিনি আমার সমস্যা থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছেন। টিম মিটিংয়ে বলতেন, তামিমই আমাদের মূল খেলোয়াড়। গোটা টুর্নামেন্টে তিনি আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। আমার মনে হয় না যে, মাশরাফি ভাইয়ের মতো অন্য কেউ এভাবে আমাকে আগলে রাখতে পারত।
* মাহমুদউল্লাহ- ২০০৯-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। বাংলাদেশ অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি ভাইয়ের প্রথম সিরিজ। বিমানবন্দর লাউঞ্জে তিনি আমার হাতে একটি খাম ধরিয়ে বললেন, পরে পড়ে নিও। বিমানে চিঠি পড়তে শুরু করি। এখনও মনে আছে, আমার সম্পর্কে অনেক ভালো কথা লিখেছিলেন। ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। অনেক সময় নিয়ে লিখেছিলেন। ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ ছুঁয়ে গিয়েছিলেন। তিনি একজন অসাধারণ মানুষ। আমাদের দলটাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি একজন বড় ভাই, বন্ধু। প্রার্থনা করি, তিনি যেন বাংলাদেশকে আরও সাফল্য এনে দেন। আরও অনেক বছর খেলেন।
* হাবিবুল বাশার- মাশরাফি অসম্ভব প্রতিভাবান এবং দৃঢ় সংকল্পের অধিকারী। বহুবার দেখেছি আনফিট অবস্থা থেকে দারুণভাবে সে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে।
* শাহরিয়ার নাফীস- ২০১০-এর ঘটনা। নিউজিল্যান্ড সিরিজে তামিম ইকবাল নেই। মাশরাফি ভাই অধিনায়ক। একদিন ড্রেসিংরুমে আমাকে ডেকে বললেন, তোমার ওপর আমার আস্থা আছে। তার অমন কথায় আমি যে কতখানি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, তা বলে বোঝাতে পারব না। এভাবেই মাশরাফি ভাই খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করেন। তার জন্যই গত দু’বছর ধরে দলটা এত ভালো করছে।
দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার পার করলেন মাশরাফি। এর আগে আকরাম খানের ক্যারিয়ার ছিল ১৪ বছর ১৮৭ দিনের। জাতীয় দলের হয়ে আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলামের ক্যারিয়ারের বয়স ছিল ১৪ বছর ৪৪ দিন। সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বয়স ছিল ১৩ বছর ৬১ দিন।
ক্যারিয়ারে ৩৬ টেস্ট, ১৬৬ ওয়ানডে ও ৪৯ টি-টোয়েন্টি খেলা মাশরাফি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ জিতবে, টেস্ট র্যাংকিংয়েও নাম্বার ওয়ান দলে পরিণত হবে।